সড়ক নিরাপত্তা
ভূমিকা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ দেশের জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ৯৩ শতাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে বিশ্বের মোট সড়ক যানের ৬০ শতাংশ থাকা স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি
বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৪ হাজার ১৯৮টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৯১৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ৪ হাজার ১৪৭টি দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৪ হাজার ১৩৮ জন প্রাণ হারান। ২০১৮ সালে ২ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২ হাজার ৬৩৫ জন। এছাড়া আহত হন আরও ১ হাজার ৯২০ জন।
ওয়ার্ল্ড হেলথ র্যাঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশেরঅবস্থান ১০৬তম। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ৩ হাজার ৭০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩ হাজার ৫০২ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৪৭৯ জন আহত হন। বাংলাদেশ পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। সুত্র: https://www.tbsnews.net/
বর্তমান নীতিমালা সমূহ
জাতীয় স্থল পরিবহন নীতিমালা ২০০৮
জাতীয় স্থল পরিবহন নীতিমালা ২০০৮ বলা হয়েছে, শহর এলাকায় অধিক সংখ্যক পায়ে হাটার পথ নির্মাণ করতে হবে এবং পথযাত্রীদের সড়ক পারাপারে বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক পারাপারে সুবিধা সৃষ্টির বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে। সড়ক পারাপারে পথচারীদের পথচারীদের সুবিধার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিগন্যাল পয়েন্টে ট্রাফিক আইন-কঠোর প্রয়োগ করা হবে। জাতীয় যুব নীতিমালা ২০১৭ বলা হয়েছে, যুবদের শরিরীক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্রীড়াকে মূল শিক্ষাকার্যক্রমের একটা নিয়মিত অংশ হিসেবে প্রর্বতন করা।
Strategic Transport Plan (STP)
এসটিপি ঢাকা শহরের যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এ নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় পথচারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাইকেলকে যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করে সাইকেলের জন্য নিরাপদ লেন তৈরি, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে সাইকেল তৈরিতে সহযোগিতা প্রদান এবং শিশুদের নিরাপদে স্কুলে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের জন্য পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরী স্বাস্থ্য সেবা নীতিমালা, ২০১৭
বর্তমান আইন সমূহ
সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮
সড়ক পরিবহ আইন-এ সড়ক নিরাপত্তা ও আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করা হবে। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর শাস্তি হবে ন্যূনতম ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা। নিবন্ধনবিহীন গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন বহন করলে অনধিক ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ট্যাক্স টোকেন না থাকার শাস্তি হবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। হেলমেট না পরলে কিংবা ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সিটবেল্ট না বাঁধলে, চলন্ত অবস্থায় চালক মোবাইল ফোনে কথা বললে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। গাড়ি চালিয়ে ইচ্ছেকৃতভাবে কাউকে খুন করলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারানুযায়ী সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হবে, বেপরোয়া গাড়ি চালনা দ্বারা কাউকে আহত বা নিহত করলে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান নতুন আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, রাস্তার উল্টোদিকে গাড়ি চালানো, লেন ভঙ্গ, মোটরসাইকেলে একজনের বেশি সহযাত্রী বহন, গাড়ির ছাদে যাত্রী তোলা, ফুটপাতে গাড়ি চালানোর মতো অনিয়মগুলোকেও কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া গাড়ির ওজন ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কের ব্যবহার, গাড়ির নিবন্ধন, রুটপারমিট ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া, মোটর ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণ, গণ-পরিবহনের আসনসংখ্যা ও ভাড়া নির্ধারণ- নিয়ন্ত্রণ, নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোও এই আইনে গুরুত্ব পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ A/RES/74/299 “ইমপ্রুভিং গ্লোবাল রোড সেফটি” রেজুলেশন গৃহীত হয়, সড়ক নিরাপত্তা 2021-2030 এর জন্য অ্যাকশনের দশক ঘোষণা করে। যার লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার অন্তত 50% মৃত্যু প্রতিরোধ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য https://www.who.int/teams/social-determinants-of-health/safety-and-mobility/decade-of-action-for-road-safety-2021-2030সংস্থা এবং জাতিসংঘের আঞ্চলিক কমিশন যৌথভাবে Global Plan for the Decade of Action প্রণয়ন করেছে।
আদালতের মামলা এবং রায়
গবেষণা ও প্রকাশনা
কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা