অস্বাস্থকর খাদ্য
ভূমিকা
অসংক্রামক রোগসহ (NCD) সকল প্রকার অপুষ্টি রোধে স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ। অস্বাস্থ্যকর ও অপুষ্টিকর খাদ্য, আজ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ । অস্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে । গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর ২০% হয় নিম্নমানের খাদ্য গ্রহণের জন্য। স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনকে চমৎকার স্বাস্থ্যের সূচক হিসেবে অনেকে মনে করলেও এটার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, বরং স্থূলতা, অতিরিক্ত ওজন এবং অপুষ্টিকে এখন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরুপে প্রতিরোধযোগ্য। বর্তমানে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ সমস্ত মৃত্যুর ৬৭% কারণ । ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগ থেকে অকাল মৃত্যুহার ৩০% কমিয়ে আনাই হচ্ছে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা (SDGs).
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি
অতিরিক্ত ওজন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ, যা খাদ্যভ্যাসের সাথে জড়িত। Bangladesh NCD Risk Factor Survey 2018 অনুসারে ২০.৩% জনগোষ্ঠী অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৮৯.৬ শতাংশ প্রতিদিন ৫ ধরনের ফল ও সবজি গ্রহণ করে না। প্রতিদিন ফল গ্রহণ করে ০.৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী এবং প্রয়োজনীয় সবজি গ্রহণ করে ২.৩ % জনগোষ্ঠী।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবজি এবং ফলমুল উৎপাদনকারী দেশ । সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদশে এখন বিশ্বে চর্তুথ অবস্থান। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ । আর এ বাস্তবতায় বাংলাদেশে মানুষের মাঝে ফল ও সবজি কম গ্রহণের প্রবণতা একটি বিস্ময়ের বিষয়। সুতরাং ফল ও সবজির উৎপাদন মানুষের এ প্রয়োজনীয় উপাদন পরিমিত গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে। পর্যাপ্ত যোগান থাকার পরও কোন কারণে এ দেশের মানুষের মাঝে ফল ও সবজি গ্রহণ করছে না তা গুরুত্বের সাথে দেখা জরুরি।
নগরায়ন এবং মানুষের জীবন যাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসের বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য প্রচলিত খাবারের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ফল ও শাক সব্জি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু চটকদার বিজ্ঞাপন ও বাজারজাতকরণের কৌশলে শিশুরা প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে প্রলুব্ধ হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন শিশু ও কিশোরদের মনোবিকাশে প্রভাব বিস্তার করে, তাদের পক্ষে এ ধরনের বিজ্ঞপানের মর্মার্থ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র এক গবেষণায় দেখা যায়, টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের প্রায় ১৩% এবং বিলবোর্ড এবং সাইনবোর্ডের ৪৯% অস্বাস্থ্য খাদ্যের বিজ্ঞাপন। যে সকল শিশুরা টেলিভিশন বেশি দেখে তাদের মাঝে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ বা অস্বাস্থ্য খাদ্য ক্রয় করতে পিতামাতাকে অনুরোধ করার প্রবণতা বেশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং জনস্বাস্থ্যের উপর বিরুপ প্রভাব, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট। সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-র শিশু-কিশোরদের খাদ্যাভাসের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, তারা প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর এবং কম পুষ্টিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করে ।
বর্তমান নীতিমালা সমূহ
সংবিধানিক দায়বদ্ধতা
দেশের আইন ও নীতি প্রণয়ণের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধান। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ তে গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি বিপ্লব এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব ১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরসাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা ১৮৷ (১) জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷ সংবিধানের এ বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশ সরকারকে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে আইন ও নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে ক্ষমতা প্রদান করেছে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। এ নীতিমালায় বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, জাতীয় শিশু নীতিসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নীতিসমূহ এবং মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ততকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া যে কোন খাদ্য বা পাণীয় এর বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যগত প্রভাব সুপষ্টভাবে উল্লেখ্য করতে হবে এবং সুপারে ইম্পোজ করে স্পষ্ট করে দেখানো কথা বলা হয়েছে ।
২০১৭ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জাতীয় যুব নীতি গ্রহণ করে যা একটি স্টিয়ারিং কমিটির তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়। এই স্টিয়ারিং কমিটি একজন সচিবের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ এবং যুবদের প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত। স্টিয়ারিং কমিটির লক্ষ্য হল, জনসাধারনের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের অপকারিতা সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে যুবকদের নিয়োজিত করা এবং সেইসাথে তাদের একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা পরিচালনা করতে উৎাসহিত করা। সেই সাথে কৃষিশিক্ষা এবং গবেষণায় বিনিয়োগ করে এটি বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মেও জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই নীতির আরেকটি লক্ষ্য হল খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে তা গ্রহণ করা পর্যন্ত মানব স্বাস্থ্যের জন্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে রক্ষা করা জন্য সকল সংশ্লিষ্ট সেক্টরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে যুবকদের সংগঠিত করা এবং জড়িত করা।
বর্তমান আইন সমূহ
বাংলাদেশে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য যেমন চিপস, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় নিয়ন্তণে বাংলাদেশে অভিজ্ঞতা বা কার্যক্রম খুবই কম। তবে মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য দ্রব্যের বিপনন প্রচারণা বন্ধে বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন করেছে এবং কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করছে। অস্বাস্থ্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এখনো বাংলাদেশের জনসাধারনের মাঝে সীমিত ধারণা করছে। তবে এ সকল খাদ্যের বাজার, প্রচারণা যেভাবে বাড়ছে এ সকল পণ্য নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ এর গবেষণায় অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণে নিম্নরূপ আইনসমূহ পাওয়া যায়।
নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩
বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার ২৩। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা উহার উপাদান বা বস্ত্ত (যেমন-ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, সোডিয়াম সাইক্লামেট), কীটনাশক বা বালাইনাশক (যেমন-ডি.ডি.টি., পি.সি.বি. তৈল, ইত্যাদি), খাদ্যের রঞ্জক বা সুগন্ধি, আকর্ষণ সৃষ্টি করুক বা না করুক, বা অন্য কোন বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া সহায়ক কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবেন না অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ, বিপণন বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
ভেজাল খাদ্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ইত্যাদি ২৫। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, কোন ভেজাল খাদ্য বা খাদ্যোপকরণ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপাদন অথবা আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন, ইত্যাদি ২৬। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, মানুষের আহার্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত মান অপেক্ষা নিম্নমানের কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপাদন অথবা আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
খাদ্য সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়াকরণ সহায়ক দ্রব্যের ব্যবহার ২৭। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য সংযোজন-দ্রব্য বা প্রক্রিয়াকরণ-সহায়ক দ্রব্য কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবেন না অথবা উক্তরূপে প্রস্ত্ততকৃত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনকৃত খাদ্য, জৈব-খাদ্য, ব্যবহারিক খাদ্য, স্বত্বাধিকারী খাদ্য, ইত্যাদি ৩১। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রবিধান দ্বারা বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের অধীন নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনুমোদন গ্রহণ ব্যতিরেকে বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনকৃত বা সংশোধিত খাদ্য, জৈব-খাদ্য, কিরণ-সম্পাতকৃত খাদ্য (Irradiated Food), স্বত্বাধিকারী খাদ্য, অভিনব খাদ্য, ব্যবহারিক খাদ্য, বিশেষ পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত খাদ্য, নিউট্রাসিউটিক্যাল এবং উক্তরূপ অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
খাদ্য মোড়কীকরণ ও লেবেলিং ৩২। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে,-
(ক) প্রবিধান দ্বারা বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের অধীন নির্ধারিত পদ্ধতিতে মোড়কীকরণ, চিহ্নিতকরণ ও লেবেল সংযোজন ব্যতিরেকে কোন প্যাকেটকৃত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না;
(খ) খাদ্যদ্রব্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি করিতে, পরিমাণ ও পুষ্টিগুণের বিষয়ে, দফা (ক) তে উল্লিখিত লেবেলে কোন মিথ্যা তথ্য বা দাবি বা অপ-কৌশল অথবা মোড়কে বিভ্রান্তিকর তথ্য বা রোগ নিরাময়কারী ঔষধি বলিয়া দাবী অথবা উৎসস্থল সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর কোন ব্যক্তব্য লিপিবদ্ধ করিতে পারিবেন না;
(গ) প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করিবার এবং মোড়ক গাত্রে উৎপাদন, মোড়কীকরণ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং উৎস-শনাক্তকরণ তথ্যাবলী স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিবার শর্ত প্রতিপালন ব্যতিরেকে প্যাকেটকৃত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না; এবং
(ঘ) প্যাকেটকৃত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণের মোড়কে লিপিবদ্ধ তথ্যাবলী পরিবর্তন করিয়া বা মুছিয়া কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয়, ইত্যাদি ৩৩। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি প্রবিধান দ্বারা বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের অধীন নির্ধারিত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়া অনুরসণের মানদণ্ড ও শর্তের ব্যত্যয় ঘটাইয়া মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হইতে পারে এইরূপ কোন প্রক্রিয়ায় প্রস্ত্ততকৃত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
হোটেল রেস্তোরাঁ বা ভোজনস্থলের পরিবেশন-সেবা৩৫। কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোন ব্যক্তি হোটেল রেস্তোরাঁ বা ভোজনস্থলে পরিবেশন-সেবা প্রদানকারী, প্রবিধান দ্বারা বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের অধীন নির্ধারিত মানদণ্ডের ব্যত্যয় ঘটাইয়া দায়িত্বহীনতা, অবহেলা বা অসতর্কতার মাধ্যমে খাদ্যগ্রহীতার স্বাস্থ্যহানি ঘটাইতে পারিবেন না।
বিজ্ঞাপনে অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ৪১। কোন ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত বিজ্ঞাপনের শর্তাদি লঙ্ঘন করিয়া বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্তিকর বা অসত্য তথ্য প্রদান করিয়া অথবা মিথ্যা নির্ভরতামূলক বক্তব্য প্রদান করিয়া ক্রেতার ক্ষতিসাধন করিতে পারিবেন না।
মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রস্তুত মুদ্রণ, বা প্রচার ৪২। (১) কোন ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণের গুণ, প্রকৃতি, মান, ইত্যাদি সম্পর্কে অসত্য বর্ণনাসম্বলিত কোন বিজ্ঞাপন প্রস্ত্তত, মুদ্রণ, প্রকাশ বা প্রচার করিতে পারিবেন না যাহার দ্বারা জনগণ বিভ্রান্ত হইতে পারে।
উৎপাদনকারী, মোড়ককারী, বিতরণকারী এবং বিক্রয়কারীর বিশেষ দায়বদ্ধতা ৪৪। (১) কোন খাদ্যাদ্রব্য বা খাদ্যেপকরণ উৎপাদনকারী বা মোড়ককারী এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের শর্তাবলী প্রতিপালনে ব্যর্থ হইলে উহা এই আইনের লঙ্ঘন হিসাবে গণ্য হইবে।
(২) কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদকারী বা বিতরণকারী এই আইনের বিধান লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হইবেন, যদি তিনি,-
(ক) মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখের পরে কোন খাদ্য সরবরাহ করেন;
(খ) উৎপাদনকারী ঘোষিত সাবধানতা সংক্রান্ত নির্দেশনা লঙ্ঘন করিয়া খাদ্য মজুদ বা বিতরণ করেন;
(গ) খাদ্য নিরাপদতা সংক্রান্ত তথ্য, ব্যবসায়িক চিহ্ন বা পরিচিতি মুছিয়া ফেলেন;
(ঘ) যাহার নিকট হইতে খাদ্যদ্রব্য মজুদ বা বিতরণের জন্য গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাকে বা উৎপাদনকারীর উৎস শনাক্তকরণ করিতে না পারেন; বা
(ঙ) অনিরাপদ জানা সত্ত্বেও খাদ্যদ্রব্য মজুদ বা বিতরণের জন্য গ্রহণ করেন।
(৩) কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিক্রেতা কোন খাদ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান লংঘনের জন্য দায়ী হইবেন, যদি তিনি,-
(ক) মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখের পরে কোন খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করেন অথবা বিক্রয়স্থলে মজুদ রাখেন;
(খ) অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় কোন খাদ্য বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণ বা মজুদ করেন অথবা বিক্রয় করেন;
(গ) খাদ্য নিরাপদতা সংক্রান্ত তথ্য, ব্যবসায়িক চিহ্ন বা পরিচিতি মুছিয়া ফেলেন;
(ঘ) যাহার নিকট হইতে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাকে বা বিতরণকারী বা উৎপাদনকারীর উৎস শনাক্তকরণ করিতে না পারেন; বা
(ঙ) অনিরাপদ জানা সত্ত্বেও মজুদ অথবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন, ২০১৮
ইনস্টিটিউশনের কার্যাবলি ৬। ইনস্টিটিউশনের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
(ক) বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডের গুণ ও মাত্রা প্রতিষ্ঠিত করা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে মালামাল, পণ্য, অবকাঠামো, কার্য ও উৎপাদন সম্পর্কিত একটি সাধারণ স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনের প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রচলিত রীতির কার্যক্রম উৎসাহিত করা এবং, সময় সময়, উক্ত স্ট্যান্ডার্ড প্রত্যাহার, রদবদল, পরিবর্তন এবং সংশোধন করা;
কতিপয় পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করিবার ক্ষমতা২০। (১) সরকার, ইনস্টিটিউশনের সহিত পরামর্শক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত শর্ত এবং ব্যতিক্রম সাপেক্ষে, যে কোনো নির্দিষ্ট বর্ণনার পণ্য যাহা রপ্তানির সহিত সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় স্ট্যান্ডার্ড মার্ক ধারণ করে না অথবা প্রচলিত সাধারণ রীতি, বাণিজ্য রীতিসহ, অনুসরণ করে না তাহা বাংলাদেশের বাহিরে লইয়া যাওয়া নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ অথবা অন্য কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে।
(২) নির্দিষ্ট বর্ণনার কোনো পণ্য সরকারের নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্সের শর্ত অনুসরণ ব্যতিরেকে বাংলাদেশের বাহিরে নেওয়া যাইবে না।
(৩) যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো প্রজ্ঞাপন প্রযোজ্য উহা Customs Act, 1969 (Act No. IV Of 1969) এর Section 16 এর অধীন সীমাবদ্ধ বা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং তদনুসারে উক্ত অপঃ এর সকল বিধান কার্যকর থাকিবে।
কতিপয় পণ্য বিক্রয়, বিতরণ, বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন, ইত্যাদি নিষিদ্ধ করিবার ক্ষমতা ২১। (১) সরকার, ইনস্টিটিউশনের সহিত পরামর্শক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত তারিখ হইতে উহাতে বর্ণিত কোনো পণ্যের, যাহা উক্ত পণ্যের ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে না, বিক্রয়, বিতরণ এবং বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করিতে পারিবে :
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন ২০০৯
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করিবার দন্ড ৩৭৷ কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করিবার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার-বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীণের্র তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিবার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রয়ের দণ্ড ৪১৷ কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করিলে বা করিতে প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণের দণ্ড ৪২৷ মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোন দ্রব্য, কোন খাদ্য পণ্যের সহিত যাহার মিশ্রণ কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, কোন ব্যক্তি উক্তরূপ দ্রব্য কোন খাদ্য পণ্যের সহিত মিশ্রিত করিলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণের দন্ড ৪৩৷ কোন ব্যক্তি মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যাহা কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করিলে তিনি অনূর্ধ্ব দুই বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিবার দণ্ড ৪৪৷ কোন ব্যক্তি কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩
মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, ইত্যাদির বিষয়ে বিধি-নিষেধ ৪। (১) কোন ব্যক্তি মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য বা উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদির আমদানি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় বা বিতরণের উদ্দেশ্যে, কোন বিজ্ঞাপন মুদ্রণ, প্রদর্শন, প্রচার বা প্রকাশ করিবেন না বা অনুরূপ কোন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করিবেন না।
মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, ইত্যাদি আমদানী, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন, বিক্রয় ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধান ৫। এই আইনের অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোন ব্যক্তি কোন প্রকার মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য বা উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি আমদানি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় বা বিতরণ করিতে পারিবেন না।
মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, ইত্যাদি ধারণপাত্র ও মোড়কে প্রদেয় তথ্যাদি ৬। (১) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের বিধানাবলী ক্ষুণ্ণ না করিয়া, কোন ব্যক্তি মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য বা উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি বিপণন, বিক্রয় ও বিতরণ করিতে পারিবেন না, যদি না উহার প্রত্যেক ধারণপাত্রে ও উহার সহিত সংযুক্ত মোড়কে সুস্পষ্ট, সহজে দৃশ্যমান, পাঠযোগ্য, বোধগম্য, সহজবোধ্য বাংলায় ও উজ্জ্বল রংয়ের লেখা দ্বারা ‘‘গুরত্বপূর্ণ তথ্যাদি’’ শিরোনামাধীন নিম্নবর্ণিত তথ্য ও বিবরণাদি মুদ্রিত বা উল্লিখিত থাকে।
বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ আইন, ২০১৪
হোটেল ও রেস্তোরাঁর তারকামান এবং শ্রেণিবিন্যাস ১৩। (১) হোটেলের তারকামান, রেস্তোরাঁর শ্রেণিবিন্যাস এবং প্রদত্ত সুবিধা ও সেবার মানদণ্ড বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
স্থানীয় সরকার আইন (সিটি কর্পোরেশন)২০০৯
তফসিল ১১. খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি:
খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি সংক্রান্ত
১১.১ কর্পোরেশন প্রবিধান দ্বারা-
ক) লাইসেন্স ব্যাতীত কোন স্থান বা ঘরবাড়িতে কোন নির্দিষ্ট খাদ্য বা পানীয়দ্রব্য প্রস্তুত বা বিক্রয় নিষিদ্ধ করিতে পারিবে;
খ) লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কোন ব্যাক্তি কর্তৃক নির্দিষ্ট খাদ্য বা পানীয় দ্রব্য বিক্রয়ার্থে নগরীতে আমদানি কিংবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য ফেরী করা নিদিদ্ধ করিতে পারবে।
গ) প্রবিধানে উল্লেখিত স্থানসমূহে নির্দিষ্ট খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদির ফেরী করা নিষিদ্ধ করিতে পারিবে;
ঘ) নির্দিষ্ট খাদ্য ও পানীয়দ্রব্য পরিবহনের সময় ও পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে;
ঙ) এই ধারার অধিনে লাইসেন্স প্রদান এবং প্রত্যাহার এবং লাইসেন্স এর জন্য প্রদেয় ফিস নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে;
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা
> ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২৫ অনুচ্ছেদে খাদ্যের অধিকারকে মানসম্মত জীবনযাত্রার অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং ১৯৬৬ সালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির ১১ অনুচ্ছেদে “ক্ষুধা ও অপুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা হচ্ছে মানব সমাজের মৌলিক অধিকার” হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে রাষ্ট্রসমূহকে আহবান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত কমিটির (CESCR) ১২ নং আর্টিকেলে সাধারণ মন্ত্যবে বলা হয়েছে যে, পর্যাপ্ত খাদ্যের অধিকার অবিভাজ্যভাবে মানুষের অন্তর্নিহিত মর্যাদার সাথে যুক্ত এবং অন্যান্য মানবাধিকার ধারার পরিপূর্ণতার জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য অধিকারের অনেকগুলি অন্তর্নিহিত সামাজিক-অর্থনৈতিক নির্ধারকগুলির মধ্যে পুষ্টিও অন্যতম [fnd]United Nations, International Covenant On Economic, Social And Cultural Rights, Article 12; Committee On Economic, Social And Cultural Rights, General Comment 14, Para 4 And 43, 2000[/fnd]। এই সংজ্ঞাগুলি অনুসারে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এমন সকল পুষ্টিকর ও ঐতিহ্যগতভাবে পর্যাপ্ত এবং শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সহজলভ্য সকল খাদ্যে সমস্ত মানুষের অধিকার রয়েছে। যেমন, খাদ্যের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি মৌলিক মানবাধিকার, খাদ্যে অধিকার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য অধিকার যেমন স্বাস্থ্য অধিকারসমূহকে আইন ও নীতিমার মাধ্যমে নিশ্চিত করার সরকারের দায়িত্ব।
খাদ্যের অধিকারের পাশাপাশি আরেকটি মৌলিক অধিকার হল স্বাস্থ্যের অধিকার। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার (UDHR) অনুচ্ছেদ ২৫ বলা হয়েছে যে “প্রত্যেকের নিজের এবং তার পরিবারের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য পর্যাপ্ত সুষ্ঠু জীবনযাত্রা গ্রহনের অধিকার রয়েছে” । একইভাবে, আন্তর্জাতিক আইন, অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কনভেনশনের (ICESCR) ১২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান উপভোগ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আহবান জানানো হয়েছে। অসংক্রমাক রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে, মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা দেওয়া বিশেষ র্যাপোর্টারের ২৪/৬ রেজুলেশন অনুযায়ী রিপোর্ট এখানে উল্লেখ্য করা যেতে পারে, যেখানে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ প্রাপ্য মান উপভোগ করার জন্য প্রত্যেকের অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে, বিশেষ প্রতিবেদক, যা নেতিবাচকভাবে নাগরিকদের পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিকারকে প্রভাবিত করে, সেই সকল খাদ্য ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত পরিবর্তনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া তিনি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলির প্রাপ্যতা এবং গ্রহন বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি নীতির রূপরেখা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক নীতি এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিপণন ও প্রচার নিয়ন্ত্রণ, সেই সাথে অস্বাস্থ্যকর খাবারের দ্বারা সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তিনি প্রতিবেদনে, স্বাস্থ্যের অধিকারের সম্মান, সুরক্ষা এবং পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রগুলির বাধ্যবাধকতা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের উৎপাদন, বিপণন এবং প্রচার থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে খাদ্য শিল্পের দায়িত্বগুলি তুলে ধরেছেন । রাষ্ট্রগুলির জন্য বাধ্যতামূলক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশিকা এবং কৌশলপত্র তৈরি করেছে, যার সাথে সরকারসমূহকে নীতি প্রণয়ন ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করবে ।
অসংক্রমাক রোগ নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কতিপয় সুপারিশ প্রদান করেছে। এছাড়াও মে ২০০৪ বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষে Global strategy on diet, physical activity and health প্রণয়ন করেছে। এই আন্তর্জাতিক কৌশলপত্রে মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শারীরচর্চার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহবান জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এই কৌশলপত্রে সদস্য দেশগুলিকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে, জাতীয় নির্দেশিকা, এবং পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া, স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচার, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শারীরচর্চা সম্পর্কিত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির কারণগুলির প্রসার কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়। সেই সাথে যে সকল পদক্ষেপ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শারীরচর্চা মাধ্যমে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বাস্থ্যকে উন্নীত করে এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি ও প্রকোপ কমায় সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করারও আহবান করা হয়।
ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সুরক্ষায় স্থায়িত্বশীল পরিবেশের গড়ে তুলতে অপুষ্টিকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত শরীরচর্চার সাথে সম্পর্কিত রোগ এবং মৃত্যুর হার হ্রাস করতে, এ কৌশলপত্রে চারটি উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা হয়েছে, যা হল:
১. অত্যাবশ্যক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হেলথ প্রমোশন এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে অপুষ্টিকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা হতে উদ্ভুত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা।
২. রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রভাবের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উপলব্ধি বৃদ্ধি করা।
৩. শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং মিডিয়াসহ সকলকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় ও স্থানীয় ভাবে স্থায়িত্বশীল এবং সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
৪. গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ এবং শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্য বিষয়ক গবেষণায় সহযোগিতা প্রদান।
আদালতের মামলা এবং রায়
নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে হাইকোর্টের রুল
জনগণের জন্য মাছ-মাংসসহ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে সরকারের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নিরাপদ খাদ্য সরবারাহে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মেও রুল জারি করেছেন আদালত।
ভেজাল খাদ্য রোধে আদালতের নির্দেশনা