রোগী সুরক্ষা

ভূমিকা 

একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা হলো অন্যতম। একটু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যই মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে এ রকম কোনো রোগী সুরক্ষায় কোন আইন নেই। প্রচলিত আইনে চিকিৎসা অবহেলার শাস্তি আছে তবে এ আইনের প্রয়োগে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আপাতত জনস্বার্থে মামলার মাধ্যমে সরাসরি হাইকোর্টে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধানের চেষ্টা করা যায়।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি

 চিকিৎসায় অবহেলা:অভিযোগ নিয়ে কোথায় যাবেন?
বাংলাদেশ চিকিৎসা অবহেলা জনিতে অভিযোগ প্রচুর। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বা বিএমডিসি একটি সরকারি সংস্থা।  বিএমডিসিতে চিকিৎসকের বা স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের অবহেলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করা যায়।
 * যে হাসপাতাল বা চিকিৎসক সম্পর্কে অভিযোগ, সেখানে যে সেবা নিয়েছেন তার সকল কাগজপত্র, চিকিৎসক, প্রতিষ্ঠানের নাম, চিকিৎসার তারিখ, সময় সহ সে কেন মনে করছে অবহেলা হয়েছে তার একটি ব্যাখ্যা সহ বিএমডিসির রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগকারীর সই ও ঠিকানা সহ লিখিত অভিযোগ করতে হবে।
 * এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে সেই অভিযোগের কপি পাঠানো হবে। তাকে কাউন্সিলের কাছে জবাব দিতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবে।
 * সেই বক্তব্য পাওয়ার পর বিএমডিসি অভিযোগকারীকে সেটি জানাবে।
 * তার সেই বক্তব্যে আপত্তি থাকলে তিনি সেটি গ্রহণ না করার অধিকার রাখেন।
 * অভিযোগ তখন একটি শৃঙ্খলা কমিটির কাছে যাবে । কমিটি যদি মনে করে এই ঘটনার তদন্ত করা প্রয়োজন তাহলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারা দরকারে হাসপাতালে যাবে এবং প্রতিবেদন জমা দেন।

বর্তমান নীতিমালা সমূহ

জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ 
জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১  তে রোগীর সুরক্ষা সুপষ্ট কোন দিকনির্দেশনা নেই।

বর্তমান আইন সমূহ

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় অবহেলা সংক্রান্ত কোন দেওয়ানি প্রতিকার পাওয়া যায়না বললেই চলে। প্রচলিত ফৌজদারি আইনে ডাক্তারি অবহেলার প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। ফৌজদারি দন্ডবিধির ধারা ২৭৫, ৩০৪ক, ৩১৬, ৩২৩, ৩২৫, ৩৩৬, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪১৬, ৪১৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চলুন দেখি এই ধারাগুলো কি বলছেঃ
 ১। ২৭৫ ধারাঃ কেউ যদি ভেজাল ওষুধ বিক্রয় করেন বা বিক্রয়ের জন্যে প্রস্তাব করেন বা ঔষধালয় হতে বিতরন করেন বা কোন ব্যক্তির দ্বারা ব্যবহার করান, সেই ব্যক্তি অনূর্ধ ছয় মাস কারাদন্ডে বা অনূর্ধ এক হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। প্রমান করতে হবে যে ওষুধের মধ্যে এমনভাবে ভেজাল দেয়া হয়েছিল যে, এর কার্যকারিতা কমেছিল বা কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়েছিল বা ক্ষতিকর হয়েছিল।
 ২। ৩০৪ক ধারাঃ বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কাজের ফলে যদি কারো মৃত্যু ঘটে, তাহলে যে ব্যক্তি অবহেলার কাজটি করেছে সেই ব্যক্তি পাচ বছর কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এই ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কোন ডাক্তার তার দায়িত্ব পালনকালে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করেছেন কিনা ।
 ৩। ৩১৬ ধারাঃ যে ব্যক্তি এরুপ অবস্থায় এমন কোন কাজ করে যে যদি তদ্বারা সে মৃত্যু ঘটাতো তবে দন্ডার্হ নরহত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হত এবং অনুরুপ কাজের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটায়, সে ব্যক্তি যে কোন বর্ননার কারাদন্ডে যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে- দন্ডিত হবে এবং অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে। এ ধারা শুধু অজাত শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
 ৪। ৩২৩ ধারাঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করবে, সে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে।
 ৫। ৩২৫ ধারাঃ যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত করে সে ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাত বছর মেয়াদের কারাদন্ড তদুপরি অর্থদন্ডে ও দন্ডিত হতে পারে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯
সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করিবার দণ্ড৫২৷ কোন ব্যক্তি, কোন আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত বিধি-নিষেধ অমান্য করিয়া সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হইতে পারে এমন কোন কার্য করিলে, তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
অবহেলা, ইত্যাদি দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য, জীবনহানি, ইত্যাদি ঘটাইবার দণ্ড৫৩৷ কোন সেবা প্রদানকারী অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানী ঘটাইলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা

রোগীর নিরাপত্তা একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অগ্রাধিকার স্বীকার করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে (WHA) রোগীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি রেজোলিউশন গৃহীত করেছে যা 17 সেপ্টেম্বর সদস্য রাষ্ট্রগুলির দ্বারা প্রতি বছর পালন করা বিশ্ব রোগী সুরক্ষা দিবস পালন করে।

আদালতের মামলা এবং রায়

রোগীর মৃত্যুর জন্য প্রমাণ ছাড়া চিকিৎসকদের দায়ী করা যাবে না
প্রত্যেক রোগীর মৃত্যুর জন্য ডাক্তারদের অবহেলাই দায়ী এমন কিছু বিবেচনায় আনা যাবে না। শুধুমাত্র যদি প্রত্যক্ষভাবে চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা প্রমাণসহ উত্থাপিত হয় তখন তা দেখা হবে কিন্ত দূর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ মারা গেলে গণহারে চিকিৎসকদের উপর ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যাবে না। ওয়ার্ল্ড এশিয়া
এক রিটের প্রেক্ষিতে ভারতের কেরালা হাইকোর্ট উল্লেখ করেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হলে যথেষ্ট প্রমান থাকতে হবে। তবে তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারনে সরাসরি কোনো মৃত্যু হলে সেটি ফৌজদারী অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হবে।
 রোগী সুরক্ষা আইন সংক্রান্ত আদালতে নির্দেশনা 

গবেষণা ও প্রকাশনা