কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা

ভূমিকা 

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, ব্যায়াম বা পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত মাদক সেবন এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এসমস্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে উর্ধমুখী।
শরীরচর্চা জন্য একটি নগরে মাঠ, পার্ক, ব্যায়ামাগার, ফুটপাত, পুকুর বা জলাশয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাজেট বরাদ্ধ এবং আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। শুধুমাত্র সচেতনতা দিয়ে মানুষকে শরীরচর্চায় উৎসাহিত  করা যাবে না, পরিকল্পিত নগরব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই কাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব।  তাই এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য সমূহ হল, শরীরচর্চা সাথে জড়িত আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা, শরীরচর্চার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ও তাদের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ করণ।

 

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি

বাংলাদেশ মানুষ পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করে না। ২০১৮ সালের Bangladesh NCD Risk Factor Survey 1  অনুসারে ২৯.১৩% জনগোষ্ঠী বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে শরীরচর্চা করছে না (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  প্রতি সপ্তাহে অনন্ত ১৫০ মিনিট ঘাম ঝড়ানো শরীরর্চচা বা কায়িম পরিশ্রমের সুপারিশ করেছে)।   অপর দিকে ২০১৮ সালে দেশে ২০.৫% প্রাপ্ত মানুষের (২৫.১% নারী এবং ১৬.০% পুরুষ) অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যায় ভোগছিলেন।.  আমাদের দেশে প্রায় ২৬% মানুষ অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা করে  এবং ১৩% পুরুষ এবং ২২% নারীর অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে । ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্ত বয়স্কদের ৭% এবং শিশুদের মাঝে ৩% ছিল অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যা, ২০১৩ সালে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১৭% শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ৪.৫% বেড়ে যায় । এছাড়া বিবাহিত নারীদের ১৮% অতিরিক্ত ওজন পরিলক্ষিত হয় 2 ।
ঢাকা শহরের সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স এর খেলাধুলা সংক্রান্ত জরিপ কার্যক্রমে লক্ষ্য করে দেখা যায় মাঠে খেলতে যায় না ১৯.৬% শিশু। ৩৪.৮% শিশু সপ্তাহে ১ দিন মাঠে যায়, ২-৩ দিন যায় ২১.৭% শিশু, ৪-৫দিন যায় ১৯.৬% শিশু। অন্যান্য ২.২% এবং উত্তর পাওয়া যায়নি ২.২ % শিশুদের থেকে। সাইকেল চালাতে জানে ৩৯.১% শিশু এবং ৬০.৯% শিশু সাইকেল চালাতে জানে না। সাঁতার জানে ৩০.৪% শিশু যেখানে ৬৯.৬% শিশুই সাঁতার জানে না ।

 

বর্তমান নীতিমালা সমূহ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৩ সালে Review Of Legislations And Policies To Control Non Communicable Diseases In Bangladesh একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রম করে  । এ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদ্যমান প্রতিটি আইন ও নীতির মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই পলিসি ব্রিফিং পেপারে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চার সাথে সম্পৃক্ত ৬টি নীতি এবং ১১ টি আইন তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যমান আইন ও নীতিসমূহে জনস্বাস্থ্য রক্ষা, খেলাধূলা সুযোগ, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয় সমূহ সংস্থাগুলোকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বাধ্যকতা সৃষ্টি করে। শরীরচর্চার জন্য অবকাঠামো সংরক্ষন, পরিবেশ রক্ষা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশগম্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর জরুরি বিধায়,  প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩, মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০,পাবলিক পার্ক আইন ১৯০৪ সংক্রান্ত আইনসমূহ আলোচনা করা হয়েছে।  রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিদ্যমান আইন অনুসারে শরীরচর্চার সুযোগ সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। 
জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ 
জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১  এর কর্মকৌশল ৩৩ এ বলা হয়েছে, সমন্বিত উপায়ে অসংক্রমাক রোগের চিকিৎসা, প্রতিরোধ, পূর্ণবাসন করা হবে। সচেতনতার পাশাপাশি জীবনধারা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হবে। 
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তে কন্যা শিশুর উন্নয়নে কন্যা শিশুর চাহিদা যেমন খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন আচরণের ব্যাপারেও বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি কন্যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। 
জাতীয় শিশুনীতি ২০১১   তে  শিশুর বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অধ্যায়ে শিশুর জন্য মানসম্পন্ন বিনোদন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।  প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য খেলার মাঠ, খেলার সরঞ্জাম রাখা, এলাকাভিত্তিক শিশু পার্ক স্থাপন এবং নগর পরিকল্পনায় আবশ্যিকভাবে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ অর্ন্তভুক্ত করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০  
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা বিস্তারের কৌশল হিসেবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনের যোগ্যতার জন্য নির্ধারিত মান অর্জন, শরীরচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের ক্ষেত্রে খেলার মাঠ থাকার শর্ত, স্কুলে শারীরিক শিক্ষার সরঞ্জাম সরবরাহ, দেশীয় খেলাধূলার প্রচলন এবং বাজেট বরাদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যম ভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা ২০১৩ পথচারীদের জন্য পায়ে হেঁটে চলার পরিবেশের মানোন্নয়ন, বিশেষত শিশু, মহিলা, বয়স্ক এবং শারীরিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের ব্যবহারের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা। পথচারীদের অগ্রাধিকার কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। প্রশস্ত ফুটপাথের সুযোগ সৃষ্টিসহ পথচারী বান্ধব সড়ক নির্মাণ। নিরাপদে পথ পরাপারের লক্ষ্যে পথচারীদের সুরক্ষিত ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। যানবাহনের গতি ও শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কার্যকরকরণ। নগরের সড়কসমূহে বাই সাইকেল চলাচলের জন্য পৃথক লেন সংরক্ষণ।
জাতীয় যুব নীতিমালা ২০১৭ বলা হয়েছে, যুবদের শরিরীক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্রীড়াকে মূল শিক্ষাকার্যক্রমের একটা নিয়মিত অংশ হিসেবে প্রর্বতন করা।
জাতীয় স্থল পরিবহন নীতিমালা ২০০৮ 
জাতীয় স্থল পরিবহন নীতিমালা ২০০৮ বলা হয়েছে, শহর এলাকায় অধিক সংখ্যক পায়ে হাটার পথ নির্মাণ করতে হবে এবং পথযাত্রীদের সড়ক পারাপারে বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক পারাপারে সুবিধা সৃষ্টির বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে। সড়ক পারাপারে পথচারীদের পথচারীদের সুবিধার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিগন্যাল পয়েন্টে ট্রাফিক আইন-কঠোর প্রয়োগ করা হবে। জাতীয় যুব নীতিমালা ২০১৭ বলা হয়েছে, যুবদের শরিরীক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্রীড়াকে মূল শিক্ষাকার্যক্রমের একটা নিয়মিত অংশ হিসেবে প্রর্বতন করা।
Strategic Transport Plan (STP)
এসটিপি ঢাকা শহরের যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এ নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় পথচারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাইকেলকে যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করে সাইকেলের জন্য নিরাপদ লেন তৈরি, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে সাইকেল তৈরিতে সহযোগিতা প্রদান এবং শিশুদের নিরাপদে স্কুলে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের জন্য পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৮-২০২৫
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৮-২০২৫ পর্যন্ত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বহুমাত্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনায় শরীরচর্চার জন্য যে সকল কার্যক্রম গ্রহনের পরিকল্পনা গ্রহন করার কথা বলা হয়েছে।
১. শরীরচর্চা সংক্রান্ত জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ করা।
২. শরীরচর্চা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুমাত্রিক নীতিগ্রহণ, যেখানে যাতায়াত, বিনোদন, খেলাধুলার মাধ্যমে কায়িক পরিশ্রমকে উৎসাহী করা হবে।
৩. নগর পরিকল্পনাবিদদের কাজ করা যাতে শরীরচর্চার সহায়ক পাবলিক স্পেস বৃদ্ধি করে। নগরের আবাসনগুলোতে নিরাপদ হাঁটা ও সাইকেলের সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্রে শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রমের জন্য পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ
৫. শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রমের সুবিধা বিষয়ে গণমাধ্যমে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা বৃদ্ধি
৬. ফুটপাতগুলোকে পথচারীদের চলাচলের উপযোগী রাখা।
সাইকেলে জন্য পৃথক লেন তৈরি, যান্ত্রিক যানবাহন এড়িয়ে মানুষকে হাঁটায় উৎসাহী করতে পার্ক, লেক, পুকুরের মতো উম্মুক্ত স্থান তৈরি।

বর্তমান আইন সমূহ

জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা
জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা  জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ অনুসারে এ সংস্থা পথচারী যাহাতে পথ চলিতে বিপদগ্রস্ত না হন এবং তাহার নিরাপদ ও অনায়াসে পথে চলাফেরা করিতে পারে সেই জন্য কর্পোরেশন প্রবিধান দ্বারা যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সর্বসাধারণের সুবিধা ও চিত্ত-বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যান নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালনা করতে পারে। সর্বসাধারনের সুবিধার্থে খোলা জায়গার ব্যবস্থা, রক্ষণাবেক্ষন এবং মানউন্নয়ন করতে পারবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনকে স্বাস্থ্যমূলক শিক্ষসহ জনস্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
 স্থানীয় সরকার (পৌরসভা আইন) ২০০৯
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা আইন) ২০০৯ পৗরসভার দায়িত্ব ও কার্যাবলী হিসেবে বলা হয়েছে নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ, শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্ত বিনোদন, আমোদ প্রমোদ এবং সাংস্কৃতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসারে সহায়তা, পৌর এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি; ইত্যাদি।
জেলা পরিষদ আইন, ২০০০
জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ জেলা পরিষদ আইনে পরিষদকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়গুলো অন্যতম।
উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮
উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এ আইনের অধীন উপজেলা পরিষদকে বিভিন্ন বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ে স্থায়ী কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন; কৃষি ও সেচ; মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ; যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন; মহিলা ও শিশু উন্নয়ন; সমাজকল্যাণ; পরিবেশ ও বন ইত্যাদি।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ আইন) ২০০৯
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ আইন) ২০০৯ এ আইনের অধীন ইউনিয়ন পর্যায়ে একাধিক স্থায়ী কমিটি করার নির্দেশনা রয়েছে। যার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা কমিটি অন্যতম।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ তে পরিষদের দায়িত্ব হিসেবে দেশের ক্রীড়া উন্নয়ন এবং ক্রীড়া কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধন; আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ক্রীড়া সংস্থার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন; স্টেডিয়াম, ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, খেলার মাঠ এবং প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ; ক্রীড়াক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ, প্রশিক্ষক, রেফারি, ফিজিও, পুষ্টিবিদ ও ক্রীড়া চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ; অসচ্ছল ক্রীড়াবিদদের আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুসারে, প্রতিবন্ধীদের জন্য চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টি সংষ্টি বিভাগগুলোর আইনী দায়িত্ব। এ আইনের ‘‘প্রবেশগম্যতা’’ বলতে ভৌত অবকাঠামো, যানবাহন, যোগাযোগ, তথ্য, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জনসাধারণের জন্য প্রাপ্য সকল সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যান্যদের মত প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমসুযোগ ও সমআচরণ প্রাপ্তির অধিকারকে বোঝানো হয়েছে। প্রতিটি স্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহজে প্রবেশ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রতিটি সংস্থার দায়িত্ব।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ 
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ আইনে পথচারীদের অধিকাার সংরক্ষনে ড্রাইভারদের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পথচারী পারাপারের নির্দিষ্টকৃত স্থানে বা উহার সন্নিকটে বা ওভারটেকিং নিষিদ্ধ এইরূপ কোনো স্থানে ওভারটেক; কোনো মহাসড়ক, সড়ক, ফুটপাত, ওভারপাস বা আন্ডারপাসে মোটরযান মেরামতের নামে যন্ত্রাংশ বা মালামাল রাখিয়া বা দোকান বসাইয়া বা অন্য কোনোভাবে দ্রব্যাদি রাখিয়া যানবাহন বা পথচারী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা এ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২ এর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে পথচারীদের নিরাপত্তা খসড়া প্রবিধান প্রণয়ন করেছে। এই প্রবিধানে ফুটপাত তৈরি, পথচারী পারাপার, পথচারীদের অগ্রাধিকার, পথচারীদের দায়িত্ব বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
আবাসনের ক্ষেত্রে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে । এ আইনে মাঠ, পার্ক, খেলাধূলার উম্মুক্ত স্থান সৃষ্টির বিষয়ে সুপষ্ট কিছুই বলা হয়নি। ক্রমবর্ধমান নগর সম্প্রসারনের বিষয়কে বিবেচনায় রেখে সরকার বিভিন্ন নগর উন্নয়ন সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করেছে। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এ সকল আইনসমূহে খেলার মাঠ, উম্মুুক্ত সংস্থার সংরক্ষন এবং ব্যবস্থাপনা করা বলা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক সংশোধিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান– ড্যাপের আওতায় নগরে উম্মুক্ত স্থান এবং খেলাধূলার স্থান রেখে খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০
মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০ এই আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না৷
পাবলিক পার্ক আইন ১৯০৪
পাবলিক পার্ক আইন ১৯০৪ তে পার্ককের পরিবেশ রক্ষা, পার্কের নিরাপত্তা এবং পার্ক সংরক্ষনের লক্ষ্যে কতিপয় বিষয় নিষিদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারকে প্রদান করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা

আন্তর্জাতিক চুক্তি International Charter of Physical Education and Sport of the United Nations Educational Scientific and Cultural Education (UNESCO) অনুচ্ছেদ-১ অনুসারে “শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলার অনুশীলন সবার জন্য একটি মৌলিক অধিকার” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। যাই হোক, যেহেতু শারীরর্চ্চার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ্য করা হয়নি, তাই এই বিষয়টি সর্বজন স্বীকৃতি মানবাধিকার সাথে সম্পৃক্ত বিষয় সাথেই যুক্ত করা ভাল। যেহেতু স্বাস্থ্যের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাই শারীরর্চ্চার অধিকার সুপষ্টভাবেই স্বাস্থ্য অধিকারের একটি অংশ।
আন্তর্জাতিক চুক্তি Universal Declaration of Human Rights (1948)(ধারা ২৫), International Covenant on Civil and Political Rights  , (অনুচ্ছেদ ১২), , Convention on the Rights of the Child (ধারা ২৩) Convention
on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women
 স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেহেতু অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব বলে বিবেচিত। স্বাস্থ্যের অধিকারের উপর জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদকের একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে ” রাষ্ট্রকে স্বাস্থ্যের অধিকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকরভাবে অসংক্রামক রোগের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি রোধে, এ সকল রোগের রোগ প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকির কারণগুলিকে মোকাবেলা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, যা অকাল অসুস্থতা এবং মৃত্যু রোধের মাধ্যমে সকল মানুষকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান অর্জন করতে সক্ষম করবে।”
শিশুদের বিষয়ে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশন শরীরচর্চা এবং বিনোদনকে মানবাধিকার হিসাবে বিবেচনা করে, রাষ্ট্রসমূহকে শিশুর স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান উপভোগ করার এই অধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছে (অনুচ্ছেদ ২৪) এবং শিশুর খেলার এবং বিনোদনমূলক কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার অধিকারকে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেয় (অনুচ্ছেদ ৩১)।
যদি শরীরচর্চাকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনার করা হ.য় তাহলে রাষ্ট্রসমূহ যথাযথ আইনী, প্রশাসনিক, বাজেট, বিচারিক, প্রচারমূলক এবং অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই অধিকারকে সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাধ্য । শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান উপভোগের জন্য প্রত্যেকের অধিকারের বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদক স্বাস্থ্যের অধিকারের সুপারিশ করেছেন যে “রাষ্ট্রসমূহ উচিত স্বাস্থ্যের অধিকারে সাথে সম্পর্কিত খেলাধুলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সম্পর্কিত আইন, নীতি এবং কর্মসূচিগুলির পর্যালোচনা করা এবং বৈষম্যমূলক আইনসমূহ বর্জন বা অবিলম্বে অপসারণ করা এবং অপেশাদার এবং পেশাদার ক্রীডাবিদদের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রাষ্ট্রসমূহের উচিত স্বাস্থ্যের অধিকার পূরণের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া, যেখানে সমন্ত মানুষ খেলাধুলা এবং শারীরিক ক্রিয়াাকলাপে নিরাপদ স্থানগুলিতে প্রবেশাধিকার অংশগ্রহণ করতে পারে”।
রাষ্ট্রগুলির উপর বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বিভিন্ন বয়সের জন্য শরীচর্চার প্রক্রিয়া এবং পরিমাণ উপর গবেষণাভিত্তিক সুপারিশগুলি তৈরি করেছে, যা দেশীয় সরকারে নীতি ও নির্দেশিকার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২০০৪ সালে ৫৭ তম বিশ^ স্বাস্থ্য সস্মেলনে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে Global strategy on diet, physical activity and health গ্রহণ করে। এই স্ট্রাটেজিতে অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির জন্য দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয় যার একটি একটি হচ্ছে অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা, দ্বিতীয় খাদ্যভাস। Sustainable Development Goals (SDGs) টার্গেট তিন এ ২০৩০ সালে মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল মৃত্যু এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ।
অসচেতনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে বিশ^ব্যাপী শরীর-চর্চ্চার সুযোগ বাড়ানোর কার্যক্রম এখনো খুব জোরালো নয়। আগামী ২০৩০ সালে মধ্যে ১৫% অপর্যাপ্ত শারিরীক পরিশ্রম কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার Global action plan on physical activity 2018–2030 ২০১৮–২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। শরীরচর্চার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সমন্বিত পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। GAPPA অনুসারে এককভাবে কোন সংস্থার শরীরচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন বিভিন্ন সংস্থার পরিকল্পিত সমন্বিত উদ্যোগ।

আদালতের মামলা এবং রায়

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মাঠ, পার্ক, হাঁটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট মাঠ পার্ক রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ঢাকার খেলার মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে করার এক রীটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঢাকার মাঠ, পার্ক ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা প্রদান করে ।
পরবরর্তীতে হাইকোর্টে অপর এক রীট মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনকে দেশের সকল মাঠ, পার্ক এবং খাল রক্ষার নির্দেশনা প্রদান করে । ২০১২ সালে ফুটপাতে মটর চালানো বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশনা দেয়, সেই সাথে সকল হাইকোর্ট এলাকায় জ্রেবা ক্রসিং নিশ্চিত করার নির্দেশন প্রদান করেন । অপর এক মামলায় আপীল বিভাগ রাজউক কর্তৃপক্ষকে মাঠ ও পার্কে জন্য বরাদ্ধকৃত স্থান প্লট তৈরিকে নিষিদ্ধ করে এবং নাগরিকদের মাঠ, পার্ক সংরক্ষন করে উন্নয়নের নির্দেশনা প্রদান করে । আদালতের নির্দেশনা এবং বিদ্যমান আইন থাকার পরও নগরে মাঠ, পার্কগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে।

 

গবেষণা ও প্রকাশনা

কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা​