তাজা শাকসবজি স্বাস্থ্যকর খাবার

ভূমিকা 

প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী প্রয়োজনের তুলনায় কম তাজা-ফল ও শাক সবজি গ্রহণ করছে । বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবজি এবং ফলমূল উৎপাদনকারী দেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদশে এখন বিশ্বে চর্তুথ অবস্থান । আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ । আর এ বাস্তবতায় বাংলাদেশে মানুষের মাঝে ফল ও সবজি কম গ্রহণের প্রবণতা একটি বিস্ময়ের বিষয়।2
তাজা ফল ও শাকসবজি গ্রহণের সাথে প্রাপ্তি ও দামের একটি নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে কর হ্রাস এবং ভতূর্কী প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভর্তূকী মূলত সরাসরি এবং পরোক্ষ এই দুইভাবে প্রদান করা যেতে পারে। তবে কর ও ভর্তূর্কী প্রদানের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব না হলে সুবিধা মানুষের নিকট পৌছে দেয়া সম্ভব হবে না। এ পলিসি পেপারে তাজা-ফল ও শাক সবজি সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালাসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সাথে এ সকল বিদ্যমান আইন ও নীতিমালায় কি ধরনের সুবিধা আছে তাও চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি

অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিরুৎসাহিত করতে কর আরোপ, বিজ্ঞাপন বন্ধ, লেবেলিং এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থা উন্নত করা, মার্কেট নিয়ন্ত্রণ কার্যকর উপায় হতে পারে। তবে তাজা শাক-সবজি এবং ফলমূল গ্রহণে উৎসাহী করতে, শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন প্রচার বা সচেতনতা কোন ধরনের কার্যকর  ব্যবস্থা হতে পারে না।  স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে জনগণকে উৎসাহী করতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে হবে। এই দুটি সমান্তরালভাবে করা সম্ভব না হলে প্রত্যাশিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভতূর্কী  এবং কর হ্রাস একটি কার্যকর উপায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ফুড সাপ্লাই চেইনের আইন ও সহায়ক নীতি প্রণয়ন, সংশোধন, পরিমার্জন করা না হলে, জনগণের কাছে সুফল পৌছে দেয়া সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ফুড চেইন যত গভীরভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে ভতূকী ততই নিবিড়ভাবে পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। 
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে কর হ্রাস এবং ভর্তূর্কী প্রদান  একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভর্তূকী মূলতঃ সরাসরি এবং পরোক্ষ এই দুইভাবে প্রদান করা যেতে পারে। তবে কর ও ভর্তূর্কী প্রদানের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব না হলে সুবিধা মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না। কর ও ভর্তূর্কী প্রদানের ক্ষেত্রসমূহ চিহিত করার পর বিদ্যমান আইন ও সাংগঠনিক কাঠামোতে বিষয়গুলো যুক্ত করা দরকার, যা ভর্তুর্কী সুবিধাকে স্থায়িত্বশীল করবে।  

বর্তমান নীতিমালা সমূহ

সংবিধানিক দায়বদ্ধতা 
দেশের আইন ও নীতি প্রণয়ণের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধান। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬ তে গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি বিপ্লব এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব ১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরসাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা ১৮৷ (১) জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷ সংবিধানের এ বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশ সরকারকে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে আইন ও নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে ক্ষমতা প্রদান করেছে।
নীতিমালা সংক্রান্ত এ গবেষণায় আট (৮) মন্ত্রণালয়ের ষোলটি (১৬) টি খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত নীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নীতিসমূহ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন, বিতরণ প্রক্রিয়ায় তাজা, শাক-সবজি গ্রহণে উৎসাহ প্রদানে কোন ধরনের ভর্তুকি বা সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়েছে কি না তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে।
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যনীতিতে পুষ্টিকর খাদ্যকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হলেও, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তাজা-শাকসবজি, ফলমূল গ্রহণের কোন নীতি বা পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি। কর্মকৌশল ৩১ এ পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। তবে নগরে তাজা শাক-সবজির বৃদ্ধিতে কোন ধরনের সুবিধা প্রদানর কথা প্রত্যক্ষভাবে বলা হয়নি।
জাতীয় পুষ্টিনীতি -র অন্যতম লক্ষ্য হলো খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার রক্ষা করা। এ নীতিতে বিপণন সুবিধা নিশ্চিত, দেশী ফল উৎপাদন বাজারজাতকরণ, তাজা শাকসবজি উৎপাদন, কৃষি উৎপাদনের ভর্তুকি প্রদান এবং ১.২ (৭) নগর কৃষি ব্যবস্থা ও পারিবারিক পযায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় পুষ্টিনীতি নীতি তে পুষ্টিকর তাজাফল এবং শাকসবজি চাষে উৎসাহী করার লক্ষ্যে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এ নীতিমালায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের মাঝে তাজা-শাকসবজি গ্রহনের প্রবণতা কম।
জাতীয় শিশুনীতিতে পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সুপষ্টভঅবে নগর তাজা শাকসবজির যোগানের বিষয়ে কোন কিছু সুপষ্ট উল্লেখ করা হয়নি। শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতের জাতীয় পুষ্টিনীতি অনুসরনের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় নারী নীতিতে সুপষ্টভাবে কন্যা শিশু এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হবে, পথশিশু ও অন্যান্য অতিবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে আনার জন্য দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করা হবে । স্কুল মিল নীতিমালায় পুষ্টির ঘাটতি পুরণে মৌসুমী তাজা শাকসবজি প্রদানের কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে ।
কৃষিনীতি তাজাফলমূল, শাকসবজি যোগান বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এ নীতির ৩.৩.৭ এ ফলিত পুষ্টি যোগান বৃদ্ধি এবং ১০.১ এ ছাদ কৃষি কৃষির কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের নীতি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের যোগানে সহায়ক হতে পারে। জাতীয় খাদ্যনীতির উদ্দেশ্য ৩ এবং কৌশল ৩.৩ এ নারী ও শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ নীতিতে দক্ষ খাদ্য বাজার ১.২, বাজার অবকাঠামোর উন্নয়ন, বেসরকারী খাদ্য ব্যবসাকে উৎসাহী করা, বাণিজ্য সহায়ক আইনও নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ উন্নয়ন, স্বল্প ব্যায়ে সুষম খাদ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের প্রবনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ, পুষ্টি উন্নয়নকারী মানসম্পন্ন এবং নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে প্রচারের কথা বলা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা মূলত চাউল জাতীয় খাদ্য বিতরণের উদ্দেশ্য প্রণীত করা হয়েছে। তবে এ নীতিমালায় দরিদ্রদের জন্য সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা ২০২০ -র ৪.২ এ উত্তম কৃষি চর্চা অনুশীলনে, নিরাপদ ও খাদ্য মান রক্ষায় ফসল সংগ্রহ, সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ এবং পরিবহন; ৪.৯ এ বাজার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, উৎপাদিত গুনগতমান সম্পন্ন কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারন ও বাজার সুনিশ্চিতকরণ এর কথা বলা হয়েছে। তবে এ নীতিমালায় পরবর্তীতে এ সকল বিষয়ে সুপষ্ট কোন কর্ম পরিকল্পনা বা দির্ক নির্দেশনা নেই। কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা ২০২০ মূলত গ্রামীন কৃষি ব্যবস্থাকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এ নীতিমালার কৌশলে ৫.১২ বিশেষায়িত সেবা সম্প্রসারণে নগর কৃষি এবং ৫.২৭ এ পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদার করা সংক্রান্ত ধারা বলা হয়েছে খাদ্যাভাস পরিবর্তন ও অধিকতর পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের যোগান নিশ্চিতে শাক-সবজি, ফলমুল ইত্যাদির উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হবে। ৫.৩০ কৃষির ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের তহবিল ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, যোগাযোগ ও বাজার ব্যবস্থা ইত্যাদি উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের তহবিল ব্যবহারে গুরুত্ব প্রদান করা হবে। জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা ২০২০ মূলত গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার ১০. এ হাওর, উপকুল ও চর, হাওর, পাহাড়ী ও বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা বলা হলেও নগর কৃষি স্থান পায়নি।
জাতীয় জৈব কৃষি নীতি ২০১৬ এর ৩.১২ অভ্যন্তরীন বাজার উন্নয়ন সংক্রান্ত উপখাতে বলা হয়েছে, বাজার গবেষণা ও ব্যবসা নির্দেশিকার মাধ্যমে কৃষক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে জৈব কৃষি পণ্যের বাজার উন্নয়নে সহযোগিতা করা হবে; দেশে উৎপাদিত জৈব পণ্য বিভিন্ন শহরে বিদ্যমান চেইন শপে পারস্পরিক অংশীদ¦ারিত্বে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। খাদ্যশস্য চলাচল নীতিমালা,২০০৮ মুলত চাউল ও গম জাতীয় খাদ্য পরিবহন ও মজুতের জন্য প্রণীত নীতি। এ নীতিমালার ৪.৪ পরিবহনের ক্ষেত্রে রেল ও নৌ পরিবহনকে অগ্রাধিকার প্রদানের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ তে নগরে তাজা শাক-সবজির যোগান নিশ্চিতে কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যম ভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা,২০১৩ সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে একটি নীতিমালা। এ নীতিমালায় নগরে পণ্য পরিবহনের সুনির্দিষ্ট কোন ধরনের নির্দেশনা নেই। তবে আমাদের দেশের যোগাযোগ কাঠামো মূলত নগর কেন্দ্রিক, নগরের আশে পাশের অঞ্চল হতে নগরে পন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রাধান্য পাবে। এ নীতিমালার ৩.৪.১৭ এ বলা হয়েছে, বাজারজাতকরণে বহুমাধ্যম ব্যবস্থাকে উৎসাহ প্রদানের দ্বারা পরিবেশগত এবং পরিচালনাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ৪.৮.৪ উপখাতে পচনশীল দ্রব পরিবহনে ট্রাকসমূহে সৌরিশক্তিতে পরিচালিত হিমায়িত ইউনিট স্থাপনে উৎসাহ প্রদানে কথা বলা হয়েছে। ৫.৬ এ বাজারজাতকরণে সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত এর পাশাপাশি নৌ ও রেল পথের সাথে সংযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। নার্সারি গাইড লাইন মূলত নার্সারি পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই গাইড লাইন নগর কৃষি ব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ গাইড লাইনে বাজার ব্যবহার এবং তাজা শাক-সবজির যোগানের জন্য কোন ধরনের দিক নির্দেশনা নেই।
জাতীয় পুষ্টিনীতি ব্যতীত প্রায় সকল নীতিতেই তাজা-শাকসবজি যোগানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। নগরে তাজা শাক-সবজির যোগান নিশ্চিতের বিষয়টি কোন নীতি পুর্ণাঙ্গ এবং সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্ব পায়নি। তবে নগরকৃষি এবং তাজা-শাকসবজির উৎপাদন ৪টি নীতিতে স্থান পেয়েছে, বিপনন ব্যবস্থা ৫টি নীতি রয়েছে, বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ ৪ টি নীতিতে রয়েছে এবং ৮টি নীতিতে প্রান্তজনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। সবচেয়ে কম গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন, মজুতে এবং ভোক্তাদের নিকট কম দামে পৌছানের বিষয়টি। প্রান্তিকজনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার জন্য যে সকল অঙ্গীকার এসেছে, তা অধিকাংশই নগরের বাইরে জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য। তাজা-শাকসবজির পচনশীল পণ্য হওয়ার এর উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন, বিতরণ ব্যবস্থা আলাদাভাবে যে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল তা কোন নীতিতেই পাওয়া যায়নি। নগরে তাজা-শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে কোন ধরনের ভতূর্কী বা সহযোগিতার প্রদানের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি।

বর্তমান আইন সমূহ

আইন রাষ্ট্রের প্রয়োগযোগ্য বিধান। আইনের প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘন হলে আদালতের মাধ্যমে তা বলবৎ করা যায়। তাই এ গবেষণায় পৃথক ভাবে আইনগুলোকে বিশ্লেষন করা হয়েছে।  আইন সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১১ টি মন্ত্রণালয়ের ৩১ টি আইন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আইন সমূহ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও নীতিমালা বিশ্লেষনের নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। 
আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন ১৯৮৯, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩  এই দুই আইন মুলত রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত। একটিতে আয়োডিনজনিত ঘাটতি পুরন এবং দ্বিতীয় শিশুদের জন্য ফর্মুলা সংক্রাান্ত পণ্য বিপণনের জন্য প্রণীত। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন, ২০১৮  মূলত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত বিধান। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩  তে তাজা-শাকসবজি সংক্রান্ত কোন বিষয়াদি পাওয়া যায়নি। 
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন আইন ২০১৮  খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করিবার জন্য সার, সেচ, বীজ ও উদ্যান উন্নয়ন সংক্রান্ত কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদন, সংগ্রহ, মেরামত প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, গুদামজাতকরণ এবং কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত। এ আইনে সুনির্দিষ্টভাবে তাজা শাক-সবজির জন্য কোন নির্দেশনা নেই। তবে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে তাজা শাক-সবজির পরিবহন, গুদামজাতকরণ এবং বিপণনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। উদ্ভিদ সংগ নিরোধ আইন ২০১১  উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যাদির আন্তর্জাতিক পরিবহনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধ এবং উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ এতদসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক ও সহায়ক ব্যবস্থাদি গ্রহণকল্পে প্রণীত আইন। 
বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮ টি তাজা শাক-সবজির মান রক্ষার সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের শাক-সবজির স্বাস্থ্য হানিকর অনিরাপদ মাত্রার কীটনাশক ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে অনেক ভোক্তা শাক-সবজি গ্রহনে শংকা প্রকাশ করে।  এ আইন ভোক্তাদের অধিকার ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬  উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত এ আইনে তাজা শাক সবজির বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১২  মুলত গবেষণার সাথে জড়িত একটি আইন। কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৮ , বীজ আইন ২০১৮  মুলত উৎপাদনের সাথে জড়িত আইন। এ সকল আইনে সরাসরি তাজা শাক-সবজির কোন বিধান বা নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
গুদামজাতকরন সংক্রান্ত বিধানের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ , স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ , স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন) আইন ২০০৯ , জেলা পরিষদ আইন ২০০০ ,উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮  বাজার মনিটরিং, ব্যবস্থাপনা, খুচরা, পাইকারী বিক্রি এবং মজুতের লাইসেসিং প্রদানের সাথে জড়িত। পৌরকর তফসিল ২০১৪ তে শাক-সবজির আড়তদারদের জন্য ৫০০-৪৫০ এবং পাইকারীদের জন্য ৪০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ২০০-১৫০ টাকার বাৎসরিক কর ধার্য্য করা আছে । বাজার ব্যবস্থায় পৌর কর হ্রাস বা আরোপের মাধ্যমে এ সকল আইনের  কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শাক-সবজি যেহেতু পচনশীল দ্রব্য তার দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থা জন্য কি ধরনের সুবিধা বিদ্যমান তা দেখা জরুরি। এ লক্ষ্যে আমরা মহাসড়ক আইন, ১৯২৫,  বেঙ্গল ফেরি আইন ১৯৮৫,সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮” এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭, রেলওয়ে আইন ১৮৯০ এবং The Inland Water Transport Authority Ordinance, 1958 , the Ports Act, 1908  সমূহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। The Inland Water Transport Authority Ordinance, 1958 আইন ব্যতীত বাকী সকল আইনে কৃষিপণ্য বা তাজা শাক সবজি পরিবহনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। The Inland Water Transport Authority Ordinance, 1958 আইনে ১৫ (১) (১২) তে কৃষিপণ্য পরিবহনে অন্যান্য পরিবহনের সাথে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। 
তাজা শাক-সবজির বাজার সংক্রান্ত আইন বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে The Essential Commodities Act, 1957 , Control of Essential Commodities Act, 1956 সমূহ বিশ্লেষণ করা হয়। এই আইনের আওতায় সরকার যে কোন পন্যকে জরুরি বা অত্যাবশীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে পারে এবং পণ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। অবাক বিষয় হচ্ছে, Control of Essential Commodities Act, 1956 আইনে তামাকজাত দ্রব্যে অত্যাবশীয় পণ্য হিসেবে এখনো বিবেচিত হলে, তাজা শাকসবজি এখনো এ তালিকায় ঠায় পায়নি। 
কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮  তে  কৃষি বিপণন তথ্য ব্যবস্থাপনা; কৃষিপণ্যের মূল্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; কৃষি বিপণন ও কৃষি ব্যবসা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষক ও কৃষিপণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু সরবরাহের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান; কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং বিপণন ও ব্যবসা সম্পর্কিত অর্থনৈতিক গবেষণা পরিচালনা; কৃষিপণ্য উৎপাদন ও ব্যবসায় নিয়োজিত কৃষক, কৃষি ব্যবসায়ী, প্রক্রিয়াজাতকারী, রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতিসমূহের সহিত নিবিড় সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ; সুষ্ঠু বিপণনের স্বার্থে কৃষিপণ্য উৎপাদন এলাকায় বাজার অবকাঠামো, গুদাম, হিমাগার, কুলচেম্বার, ইত্যাদি নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ; কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের মজুদ বা গুদামজাতকরণ, পণ্যের গুণগতমান, মেয়াদ, মোড়কীকরণ ও সঠিক ওজনে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিবীক্ষণ; কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন; কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান; কৃষিপণ্যের মূল্য সহায়তা প্রদান; কৃষিপণ্যের অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ; কৃষিভিত্তিক শিল্প ও ব্যবসার উন্নয়ন, উৎসাহ প্রদান, প্রসার এবং চুক্তিভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; বাজারকারবারি অথবা কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠন, সমিতি, সংস্থা, কৃষিভিত্তিক সংগঠন ও সমবায় সমিতিসমূহকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, তালিকাভুক্তকরণ এবং, প্রয়োজনে, জাতীয় এবং জেলা পর্যায়ে কৃষিভিত্তিক সংগঠনসমূহের ফেডারেশন অথবা কনসোর্টিয়াম গঠন; বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সুপার শপে সংরক্ষিত কৃষিপণ্যের গুণগতমান, নির্ধারিত মূল্য ও বিপণন কার্যক্রম পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পরামর্শ প্রদান;কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের বিপণন কার্যক্রম সংক্রান্ত মান সংরক্ষণ, পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ দায়িত্ব কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে প্রদান করা হয়েছে। 
এ আইনের প্রদত্ত ক্ষমতা বলে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত তারিখ হইতে, কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যে কোনো বাজারকে প্রজ্ঞাপিত বাজার হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবে।গুদাম ও হিমাগারের লাইসেন্স প্রদান এবং প্রত্যেক গুদাম বা হিমাগারে মজুতকৃত কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিধি দ্বারা নির্ধারন করতে পারবে। ) প্রজ্ঞাপিত বাজারের জন্য মার্কেট চার্জ নির্ধারণ করার পাশাপাশি কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ মজুত অথবা গুদামজাতকরণের জন্য গুদাম অথবা হিমাগার মালিক কর্তৃক মজুতকারির নিকট হতে আদায়যোগ্য ভাড়ার হার নির্ধারণ করতে পারবে। জরুরি অবস্থা বা সংকট মোকাবিলার জন্য সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত সময়ের জন্য, এক বা একাধিক কৃষিপণ্য সমগ্র দেশ বা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রজ্ঞাপিত শস্য হিসাবে ঘোষণা করতে পারবে। বাজারকারবারি, কৃষি ব্যবসায়ী, গুদাম বা হিমাগার মালিক, সুপার শপ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তার নিকট বাজার তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য চাইতে পারবে এবং তারা উহা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। এ আইনের আওতায় কৃষি বাজার ব্যবস্থার অনেক কিছুই নিয়ে আসা হয়েছে, তবে  কৃষি পণ্য পরিবহন একটি বড় চ্যালেঞ্জিং সমস্যা, এই আইনে পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট তথ্য বা দিক নির্দেশনা নেই। 

আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা

> ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২৫ অনুচ্ছেদে খাদ্যের অধিকারকে মানসম্মত জীবনযাত্রার অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং ১৯৬৬ সালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির ১১ অনুচ্ছেদে “ক্ষুধা ও অপুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা হচ্ছে মানব সমাজের মৌলিক অধিকার” হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে রাষ্ট্রসমূহকে আহবান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত কমিটির (CESCR) ১২ নং আর্টিকেলে সাধারণ মন্ত্যবে বলা হয়েছে যে, পর্যাপ্ত খাদ্যের অধিকার অবিভাজ্যভাবে মানুষের অন্তর্নিহিত মর্যাদার সাথে যুক্ত এবং অন্যান্য মানবাধিকার ধারার পরিপূর্ণতার জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য অধিকারের অনেকগুলি অন্তর্নিহিত সামাজিক-অর্থনৈতিক নির্ধারকগুলির মধ্যে পুষ্টিও অন্যতম United Nations, International Covenant On Economic, Social And Cultural Rights, Article 12; Committee On Economic, Social And Cultural Rights, General Comment 14, Para 4 And 43, 2000।  এই সংজ্ঞাগুলি অনুসারে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এমন সকল পুষ্টিকর ও ঐতিহ্যগতভাবে পর্যাপ্ত এবং শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সহজলভ্য সকল খাদ্যে সমস্ত মানুষের অধিকার রয়েছে। যেমন, খাদ্যের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি মৌলিক মানবাধিকার, খাদ্যে অধিকার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য অধিকার যেমন স্বাস্থ্য অধিকারসমূহকে আইন ও নীতিমার মাধ্যমে নিশ্চিত করার সরকারের দায়িত্ব। 
 খাদ্যের অধিকারের পাশাপাশি আরেকটি মৌলিক অধিকার হল স্বাস্থ্যের অধিকার। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার (UDHR) অনুচ্ছেদ ২৫ বলা হয়েছে যে “প্রত্যেকের নিজের এবং তার পরিবারের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য পর্যাপ্ত সুষ্ঠু জীবনযাত্রা গ্রহনের অধিকার রয়েছে” ।  একইভাবে, আন্তর্জাতিক আইন, অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কনভেনশনের (ICESCR) ১২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান উপভোগ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আহবান জানানো হয়েছে। অসংক্রমাক রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে, মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা দেওয়া বিশেষ র‌্যাপোর্টারের ২৪/৬ রেজুলেশন অনুযায়ী রিপোর্ট এখানে উল্লেখ্য করা যেতে পারে, যেখানে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ প্রাপ্য মান উপভোগ করার জন্য প্রত্যেকের অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে, বিশেষ প্রতিবেদক, যা নেতিবাচকভাবে নাগরিকদের পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিকারকে প্রভাবিত করে, সেই সকল খাদ্য ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত পরিবর্তনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের কথা বলা হয়েছে।  এছাড়া তিনি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলির প্রাপ্যতা এবং গ্রহন বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি নীতির রূপরেখা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক নীতি এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিপণন ও প্রচার নিয়ন্ত্রণ, সেই সাথে অস্বাস্থ্যকর খাবারের দ্বারা সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তিনি প্রতিবেদনে,  স্বাস্থ্যের  অধিকারের সম্মান, সুরক্ষা এবং পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রগুলির বাধ্যবাধকতা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের উৎপাদন, বিপণন এবং প্রচার থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে খাদ্য শিল্পের দায়িত্বগুলি তুলে ধরেছেন । রাষ্ট্রগুলির জন্য বাধ্যতামূলক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশিকা এবং কৌশলপত্র তৈরি করেছে, যার সাথে সরকারসমূহকে নীতি প্রণয়ন ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করবে  ।  
অসংক্রমাক রোগ নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কতিপয় সুপারিশ প্রদান করেছে। এছাড়াও মে ২০০৪ বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষে Global strategy on diet, physical activity and health প্রণয়ন করেছে।  এই আন্তর্জাতিক কৌশলপত্রে মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শারীরচর্চার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহবান জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এই কৌশলপত্রে সদস্য দেশগুলিকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে, জাতীয় নির্দেশিকা, এবং পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া, স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচার, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শারীরচর্চা সম্পর্কিত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির কারণগুলির প্রসার কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়। সেই সাথে যে সকল পদক্ষেপ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শারীরচর্চা মাধ্যমে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বাস্থ্যকে উন্নীত করে এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি ও প্রকোপ কমায় সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করারও আহবান করা হয়।
ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সুরক্ষায়  স্থায়িত্বশীল  পরিবেশের গড়ে তুলতে  অপুষ্টিকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত শরীরচর্চার সাথে সম্পর্কিত রোগ এবং মৃত্যুর হার হ্রাস করতে, এ কৌশলপত্রে চারটি উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা হয়েছে, যা হল:
১. অত্যাবশ্যক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হেলথ প্রমোশন এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে অপুষ্টিকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা হতে উদ্ভুত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা। 
 ২. রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রভাবের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উপলব্ধি বৃদ্ধি করা। 
৩. শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং মিডিয়াসহ সকলকে সম্পৃক্ত করে  আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় ও স্থানীয় ভাবে স্থায়িত্বশীল এবং সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। 
৪. গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ এবং  শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্য বিষয়ক গবেষণায় সহযোগিতা প্রদান।

 

আদালতের মামলা এবং রায়

নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে হাইকোর্টের রুল 
জনগণের জন্য মাছ-মাংসসহ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে সরকারের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নিরাপদ খাদ্য সরবারাহে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মেও রুল জারি করেছেন আদালত।
ভেজাল খাদ্য রোধে আদালতের নির্দেশনা 

 

গবেষণা ও প্রকাশনা

কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা​