জলবায়ু

ভূমিকা 

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। এটি শুধু পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে না, বরং জনস্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ, আমাদের জীবনযাত্রার ওপর বহুমুখী প্রভাব সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ একটি জলবায়ু সংবেদনশীল দেশ, যার ভূগোলিক অবস্থান এবং ঘনবসতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও তীব্র।
বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বাংলাদেশেও গড় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে (International Centre for Climate Change and Development, 2020)। বিশেষত গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রায় ১.৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে, যা কৃষি, জলবায়ু, এবং জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ১৯৬১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর গড়ে ৩.৩ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে এই হার আরও বেশি, প্রায় ৫ থেকে ৭ মিলিমিটার পর্যন্ত। এর ফলে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাড়িঘর হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়ছে। ঘন ঘন বন্যা এবং সুপার সাইক্লোনের কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়, যার ফলে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। একইসঙ্গে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক।
এছাড়া, অনাবৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি খরার কারণে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যার ফলে খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে এবং পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে, যা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। শিল্প ও যানবাহনের ধোঁয়া এবং জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার এই অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘটে যাওয়া বন্যায় ৭১ জন মারা গিয়েছে, এবং প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পর পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫,০০০ মানুষ ডায়রিয়া ও ত্বকের সংক্রমণের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যার কারণে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এবং ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৩.৫ বিলিয়ন টাকা (প্রায় ২৮২ মিলিয়ন ডলার)। এছাড়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে ধান উৎপাদনে গড়ে ১০ শতাংশ হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশগত উদ্বেগ, দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও মানসিক চাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ১% হ্রাস পাচ্ছে, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১.৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরি, বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য খাতের জলবায়ু অভিযোজন নীতি বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ব্যক্তি পর্যায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ও পরিবেশ রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

বর্তমান নীতিমালা সমূহ

নীতিমালা সমূহ
বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে বিভিন্ন নীতিমালা ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই নীতিমালাগুলো জনস্বাস্থ্য, কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
1. বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (BCCSAP)
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (BCCSAP)” প্রণয়ন করে, যা জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের (mitigation) জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে। এই নীতিমালা ছয়টি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করে- 
খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য
● দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
● কৃষি, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
● জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা
● নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতের অভিযোজন
● জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা
এই নীতিমালার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
2. জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮
জাতীয় পরিবেশ নীতি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয় আনতে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে তৈরি করা হয়ছে। এটি মূলত টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয়। এর আওতায়-
● বায়ুদূষণ ও পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ
● শিল্প ও কৃষি খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার
● বন উজাড় প্রতিরোধ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
● জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ
3. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ঘন ঘন দুর্যোগ দেখা দেয়। এই আইনের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা হয়ছে। এতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, ভূমিধস ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার নির্দেশনা রয়েছে। 
4. জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানি পাওয়া কঠিন হয় পড়েছে। জাতীয় পানি নীতি পানি সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
5. বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০০৮
বায়ুদূষণ কমানো এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়ছে, যা পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সহায়তা করছে।
6. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অনুযায়ী পরিকল্পনা
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDG) আলোকে বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ও জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিয় কাজ করছে। বিশেষ করে SDG ৩ (সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা) এবং SDG ১৩ (জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ) লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
7. স্বাস্থ্য খাতের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের অভিযোজন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রয়ছে-
● জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ
● জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা তৈরি
● বিশুদ্ধ পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন
● জনসচেতনতা বৃদ্ধি
বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব নতুন রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে, যেমন- ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ, সেগুলোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ছে।
বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। তবে এসব নীতিমালার কার্যকারিতা নির্ভর করে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর। জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা দরকার।

বর্তমান আইন সমূহ

বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বেশ কয়কটি আইন প্রণয়ন করেছে। এসব আইন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমানো, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। নিচে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইন তুলে ধরা হলো-
1. পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)
বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ পরিবেশ রক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এটি-
● পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং সংরক্ষণ নীতি নির্ধারণ করে।
● শিল্প কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাধ্যতামূলক বিধান দেয়।
● জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের নির্দেশনা দেয়।
এই আইনের আওতায় পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং জরিমানা আরোপ করা যায়।
2. বন আইন, ১৯২৭
বনভূমি সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং কার্বন শোষণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বন আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি-
● বন উজাড় রোধ করে এবং নির্বিচারে গাছ কাটা নিষিদ্ধ করে।
● সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
● জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে বন সংরক্ষণের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করে।
3. বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য এই আইন প্রণীত হয়ছে। এর আওতায়-
● জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন (mitigation) কার্যক্রমের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়।
● জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য গবেষণা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
● দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।
এই আইন বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নীতিমালার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
4. জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা এবং ভূমিধস মোকাবিলার জন্য এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর আওতায়-
● দুর্যোগকালীন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করা হয়।
● দুর্যোগ-প্রবণ এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
● দুর্যোগ প্রস্তুতি, ঝুঁকি নিরসন এবং জলবায়ু অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়ন করা হয়।
5. পানি সংরক্ষণ আইন, ২০১৩
পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। এই আইনের মাধ্যমে-
● ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
● নদী, খাল ও জলাধার সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়ছে।
● লবণাক্ততা বৃদ্ধি রোধে উপকূলীয় অঞ্চলে পানিসম্পদ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ছে।
6. বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২
বায়ুদূষণ বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা। এই বিধিমালার আওতায়-
● শিল্প, যানবাহন ও নির্মাণ কাজ থেকে নির্গত দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ছে।
● স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর জন্য দূষণমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ছে।
● যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়ছে।
7. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯
নিরাপদ খাদ্য ও পণ্য নিশ্চিত করা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আইনের আওতায়-
● ভেজাল খাদ্য, দূষিত পানি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়ছে।
● স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনে মান নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ছে।
8. বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি আইন (প্রস্তাবিত)
বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে কাজ করছে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়িয় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়ছে। এর আওতায়-
● সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।
● জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে।
উল্লিখিত আইন ও বিধিমালাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে আইনগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা

বাংলাদেশ একটি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রটোকলের মাধ্যমে দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এই বাধ্যবাধকতাগুলো বাংলাদেশের জলবায়ু নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
1. প্যারিস চুক্তি (Paris Agreement), ২০১৫
প্যারিস চুক্তি হলো জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৫টি দেশের মধ্যে গৃহীত হয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্লোবাল উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত দেশগুলোর জীববৈচিত্র্য, পানি সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং এটি বাংলাদেশের জলবায়ু নীতিমালার জন্য একটি প্রধান আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা। এর আওতায়-
● বাংলাদেশকে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) সংরক্ষণ এবং রূপান্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়।
● এর মাধ্যমে দেশটি তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
● বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার অনুরোধ জানাতে পারে।
2. কিয়োটো প্রটোকল (Kyoto Protocol), ১৯৯৭
কিয়োটো প্রটোকল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা গ্লোবাল উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর নির্দেশনা দেয়। বাংলাদেশ কিয়োটো প্রটোকলের আওতায় একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এছাড়া, কিয়োটো প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়ক।
3. রিও ডিক্লারেশন (Rio Declaration), ১৯৯২
১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত পৃথিবী সম্মেলনে রিও ডিক্লারেশন গৃহীত হয়, যেখানে ২৭টি প্রস্তাবনা ও নীতি নির্ধারণ করা হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীটির উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নীতি, কারণ এটি দেশের পরিবেশ ও জলবায়ু নীতিমালার অংশ হিসেবে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করে।
4. বায়োডাইভার্সিটি কনভেনশন (Convention on Biological Diversity, CBD), ১৯৯২
বায়োডাইভার্সিটি কনভেনশন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে গৃহীত হয়। বাংলাদেশ এই চুক্তির সদস্য রাষ্ট্র, এবং এর মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।
এছাড়া, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি, বনভূমি এবং জলাশয় সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
5. কপেনহেগেন চুক্তি (Copenhagen Accord), ২০০৯
কপেনহেগেন চুক্তি একটি অ-যৌথ আন্তর্জাতিক চুক্তি যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি রাষ্ট্রগুলোর প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে। এতে বাংলাদেশকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ছে।
6. সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (SDGs)
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) ২০৩০ সাল নাগাদ বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে SDG ১৩ হল “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ”। বাংলাদেশ SDGs এর আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
7. গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট (Glasgow Climate Pact), ২০২১
গ্লাসগো সম্মেলনে (COP26) গৃহীত এই প্যাক্টটি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এর মাধ্যমে জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তি ও প্রটোকলের অংশ হিসেবে তার জলবায়ু নীতিমালা এবং কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সমন্বয় করছে। এসব বাধ্যবাধকতার বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জলবায়ু স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

আদালতের মামলা এবং রায়

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা এবং রায় রয়ছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় আইনি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। এই মামলাগুলোর মাধ্যমে আদালত সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাদের পরিবেশগত এবং জলবায়ু সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করেছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দুর্যোগের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ দেশের আইন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিচে বাংলাদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্পর্কিত মামলা ও রায় নিয়ে আলোচনা করা হলো-
1. ইস্টার্ন ফার্মাসিউটিক্যালস মামলাটি (২০১০)
এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত মামলা, যেখানে আদালত পোল্ট্রি শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ছিল। মামলার মধ্যে উল্লেখ করা হয়ছিল, এই বর্জ্য সরাসরি জলাশয় ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আদালত নির্দেশনা দেয় যে, এসব বর্জ্য পরিশোধন করতে হবে এবং আইন অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
2. বায়ু দূষণ মামলাটি (২০১১)
বাংলাদেশে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি উল্লেখযোগ্য মামলা ছিল যেখানে আদালত ঢাকার বায়ুদূষণকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে ঘোষণা করে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়ছিল। আদালত ঢাকায় বায়ুদূষণ কমানোর জন্য গাড়ির নির্গমন পরীক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়।
এছাড়াও, আদালত নির্দেশনা দেয় যে, ঢাকা শহরে হেভি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে যাতে বায়ু মান উন্নত হয়।
3. নদী উদ্ধার মামলা (২০১৬)
নদী পুনরুদ্ধারের জন্য ২০১৬ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা দায়র করা হয়ছিল, যাতে আদালত নির্দেশনা দেয় যে, বাংলাদেশের নদীগুলো রক্ষা ও পুনঃস্থাপন করতে হবে। এই মামলায় নদী দূষণ, ভূমি দখল এবং অবৈধ সয়ল মাইনিংয়র কারণে নদী সংকোচন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দেয়। আদালত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নদী পুনরুদ্ধারের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ছিল, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলার জন্য উপকূলীয় এলাকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
4. দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় বন সংরক্ষণ মামলা (২০১৭)
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিরোধে কন্ট্রোল ও সুরক্ষার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মামলা ছিল। এতে আদালত সরকারকে উপকূলীয় বনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ছিল। আদালত জানিয়ছে যে, উপকূলীয় বনসমূহ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে এবং এই বনের ধ্বংস বাংলাদেশের জলবায়ু সুরক্ষা প্রক্রিয়ার জন্য বিপদজনক।
5. সেন্ট্রাল ব্যাংক বনভূমি মামলা (২০২০)
এই মামলায় বাংলাদেশ পরিবেশ আদালত বনভূমির বাণিজ্যিক ব্যবহার, বন উজাড় এবং ভূমি দখলের বিরুদ্ধে একটি রায় দিয়ছিল। আদালত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত আইন প্রয়োগের নির্দেশ দিয়ছিল। বিশেষভাবে, আদালত রাষ্ট্রীয় বনভূমির সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রভাবিত এলাকায় রক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
6. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় মামলার আদেশ (২০১৯)
২০১৯ সালে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আদালত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ছিল। মামলার মধ্যে আদালত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে দেশব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়ছে, সেগুলো মোকাবিলায় বিশেষ কৌশল গ্রহণ করতে বলেছিল। এর আওতায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কলেরা ইত্যাদি রোগের প্রতিরোধের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
7. কক্সবাজার উপকূল রক্ষার জন্য রায় (২০২১)
কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার অবৈধ নির্মাণ কাজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি সম্পর্কে একটি মামলা দায়র করা হয়ছিল, যেখানে আদালত উপকূলীয় এলাকা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। আদালত জানিয়ছে, উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে, সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করা এবং ত্রাণ কাজ চালিয় যাওয়ার জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সুরক্ষায় আদালতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব মামলা এবং রায় সরকারের জলবায়ু নীতিমালা এবং কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করতে সাহায্য করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছে।
পরিবেশ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে আদালতের রায় পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ প্রণীত হয়ছে, যা পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত আদালত প্রতিষ্ঠা কর
 সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা ও জমি দখলের অভিযোগে বন বিভাগের চারটি মামলা দায়ের

গবেষণা ও প্রকাশনা